Saturday, March 18, 2023

এক সময় মালাই-মাখন খাওয়ানো পাক তালিবানই এখন ইসলামাবাদের হাড় হিম করা দুশমন

বছর ২২ আগে আফগানিস্তানে যখন বড়সড় রাজনৈতিক পালাবদল চলছিল, সেই সময়ে পাক-আফগান সীমান্তে পোঁতা হয়েছিল ‘তেহরিক ই তালিবান পাকিস্তান’ (টিটিপি) নামে এক জঙ্গি সংগঠনের বীজ। যারা সাধারণ ভাবে পরিচিত পাক তালিবান বা পাকিস্তান তালিবান নামে। এক সময় ইসলামাবাদের রাজনৈতিক শক্তির একটি বড় অংশের মদতপুষ্ট সেই জঙ্গি সংগঠনই এখন হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদের ‘ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন’।
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে এখন টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে পাকিস্তানে। এই অবস্থায় নখদাঁত বার করে পাকিস্তানকে টুকরো করতে উদ্যত টিটিপি। ইসলামাবাদের সার্বভৌমত্বকে প্রতি মুহূর্তে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ওই জঙ্গি সংগঠন
আমেরিকার মাটিতে আল কায়দার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর আফগানিস্তানে তখন চলছে আমেরিকার সামরিক অভিযান। মূল আফগান ভূখণ্ড ছেড়ে বহু তালিবান যোদ্ধা তখন আশ্রয় নিয়েছেন পাক-আফগান সীমান্তের খাইবার-পাখতুনখাওয়া এলাকায়। আশ্রয় নিয়েছিলেন অজস্র উজবেক এবং চেচেন জঙ্গিও। তাঁদের সাহায্য নিয়ে পাক-আফগানিস্তান সীমান্তের একাধিক গোষ্ঠীকে একত্রিত করে টিটিপি গড়ে তোলেন মেহসুদ। ওয়াজিরিস্তান হয়ে ওঠে টিটিপির ঘাঁটি। অনেকে ওই এলাকাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘যোদ্ধাদের প্রজননক্ষেত্র’ নামে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জন্মলগ্ন থেকে এখনও পর্যন্ত আফগানিস্তানের তালিবান গোষ্ঠী এবং আল কায়দার মতো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলেছে টিটিপি। পাশাপাশি, টিটিপিকে নানা সাহায্য দিয়ে পুষ্ট করেছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক শক্তির একটি বড় অংশও। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই জঙ্গিগোষ্ঠীটি আসলে ৯/১১ হামলার পর আল কায়দার জিহাদি নীতিরই অন্যতম ফসল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবদ্দশায় আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরি এবং আফগান তালিবান নেতা মোল্লা মহম্মদ ওমরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল টিটিপি নেতৃত্বের। আফগানিস্তানে আমেরিকার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চলাকালীন টিটিপি সেখানে যোদ্ধা সরবরাহ করত বলেও মত অনেকেরই।

টিটিপির ঘোষিত উদ্দেশ্য পাক-আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী উপজাতি এলাকা (ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়া বা ফাটা) এবং খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশে স্বশাসন চালু করা। পাশাপাশি, ওই সব এলাকায় শরিয়তি আইন কঠোর ভাবে প্রয়োগ করাও এই সংগঠনের ঘোষিত লক্ষ্য।
অতি সম্প্রতি উত্তর পাকিস্তানে সমান্তরাল সরকার গঠনের ঘোষণা করে দিয়েছে টিটিপি। এর জন্য পৃথক মন্ত্রকও ঘোষণা করা হয়েছে। টিটিপির মুখপত্র ‘দ্য খোরাসান ডায়েরি’তে প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা, বিচার, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা, তথ্য, ফতোয়া জারি, পরিকাঠামো নির্মাণের মতো কয়েকটি মন্ত্রকের কথা লেখা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment